শীতকাল, কুয়াশা জড়ানো সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন। সূর্যের দেখা পাননি। চারপাশের শিশির বিন্দুর ফোঁটা উপভোগ করছেন। যদি এমন সময়ে ঠান্ডার আমেজে যদি শীতের পিঠা খান, তাহলে কেমন লাগবে বলুন তো?
হ্যা, আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে যদি ধোয়া ওঠা গরম শীতের পিঠা হাতে পান, খেয়ে অবশ্যই তৃপ্তি তো পাবেনই। একই সাথে অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হবে আপনার মধ্যে।
বাংলা হেমন্তের শেষ থেকে বসন্ত পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। যদিও পৌষ এবং মাঘ শীতকাল। আর হেমন্তেকাল মানেই নতুন ধান, নতুন চাল এর উৎসব। যা পিঠা তৈরির একটা উপাদান। বাঙালি মাত্রই খাদ্যরসিক। হরেক রকমের পিঠাপুলির আয়োজনে ঘর পরিপূর্ণ থাকে শীতকালে। বিভিন্ন ধরনের শীতের পিঠা বানানোর পদ্ধতি এবং স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন। চলুন আজকে আমরা জানবো শীতের বিভিন্ন পিঠার পরিচিতি ও তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে:
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
শীতের পিঠা এর অন্যতম প্রধান উপাদান গুলো হচ্ছে আতপ চাল অর্থাৎ সিদ্ধবিহীন চাল, সুজি, নারিকেল, খেজুর বা তাল বা আখের গুড়, চিনি ইত্যাদি।
এছাড়াও খেজুর গাছ এর রস, দুধ, কিসমিস, চেরি ফল, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। আপনি সুঘ্রাণ এর জন্য পিঠা অনুযায়ী উপযুক্ত মশলা যেমন পরিমাণ মতো লবঙ্গ, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
পিঠা আমরা সচারাচর দুই ধরনের খেয়ে থাকি। তেলে ভাজা এবং ভাপ দিয়ে তৈরি পিঠা। শীতের পিঠা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চিতই পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, নকশি পিঠা, ক্ষীরপুলি, মালপোয়া, আন্দসা ইত্যাদি।
নকশি পিঠা খুবই পরিচিত এবং মিষ্টি স্বাদ এর একটি পিঠা। এই পিঠার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নকশা করা হয় উপাদান গুলো দিয়ে। শীতের পিঠা হিসেবে নকশি পিঠার কদর বেশ ভালো।
রেসিপি: চুলায় একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানির মধ্যে লবন ও ঘি দিন ।ফুটে উঠলে তার মধ্যে আতপ চাল এর গুড়া দিয়ে সিদ্ধ করে কাই বানাতে হবে। প্রায় আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বানান। তারপর আপনার পছন্দমতো নকশা করুন খেজুর কাটা দিয়ে। এবার সুন্দর করে কেটে তেলে ভাজুন।ভাজা হয়ে গেলে চিনির সিরায় ১ মিনিট এর মতো রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।
শহর অঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যে কয়েকটি পিঠা খুব বেশি পরিমাণ এ দেখা যায় তার মধ্যে ভাপা পিঠা সবার উপরে থাকবে।শীতের পিঠা মানে ই ভাপা পিঠার স্বাদ অতুলনীয়।
রেসিপি: প্রথমে পরিমাণ মতো চালের গুঁড়া তে লবণ মিশিয়ে নিন। হালকা পানি দিয়ে ঝুরঝুরে করে মাখিয়ে নিন। একটি চালনি তে চেলে নিন। এখন ভাপা পিঠা বানানোর হাড়িতে পানি দিন এবং চুলায় জ্বাল দিন। এরপর একটা পাত্রে চালের গুঁড়া নিন। মাঝে নারিকেল এবং শুকনা গুঁড় মিশিয়ে নিন। পরিমাণ মতো সময় ভাপ দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ভাপা পিঠা।
শীতের পিঠা হিসেবে বহুল প্রচলিত এবং খুব সহজেই বানানো যায় এমন একটা পিঠা হচ্ছে চিতই পিঠা।
রেসিপি: পরিমাণ মতো চালের গুঁড়া এর সাথে পানি মিশিয়ে তরল মিশ্রণ তৈরি করুন।খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি তরল বা বেশি ঘন না হয়।পিঠা বানানোর ছাচে হালকা তেল দিন।এখন চুলায় মধ্যম তাপে ৩-৪ মিনিট ভাজুন।নামিয়ে পরিবেশন করুন চিতই পিঠা।
এখন আপনি বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, যেমন ধনিয়া পাতা, কালোজিরা, শুকনো মাছ, সরিষাবাটা, বিভিন্ন ধরনের মাংস ভুনা যেমন গরু, খাসি বা মুরগী দিয়েও খেতে পারেন।
আবহমান কাল ধরে গ্রাম বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহি একটি পিঠা হচ্ছে দুধচিতই পিঠা। এই পিঠা যেমন রসালো ঠিক তেমনি খুবই স্বাদের।
রেসিপি: হুবহু অনুরূপভাবে প্রথমে চিতই পিঠা বানাতে হবে। এরপর দুধ, গুড়, নারিকেল এবং খেজুর গাছের রসের পিঠা ভিজিয়ে রাখুন ৬-৭ ঘন্টা। এখন পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন মজাদার পিঠা।
এই পিঠার নামকরণ করা হয়েছে পাটির মতো দেখতে রুটি এর মধ্যে ক্ষীর পুরে দেয়া হয় এজন্য। খুবই মজাদার এবং সহজে তৈরি করা যায় পাটিসাপটা পিঠা।
রেসিপি: প্রথমে ভিতরের পুর বানান। এজন্য দুধ, চালের গুঁড়া, নারিকেল, মিস্টি স্বাদের জন্য গুঁড় এবং সুঘ্রাণ এর মশলা এক সাথে জ্বাল দিন। ঘন হলে নামিয়ে ফেলুন।
এবার রুটি বানান স্বাভাবিক নিয়মে, উপাদান: দিন দুধ, চালের গুঁড়া, সুজি। কাই তৈরি করুন। তারপর রুটিতে তাপ দিন। পরে রুটির মধ্যে পুর দিয়ে সুন্দর করে রুটি পেচিয়ে নিন। পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন।
পিঠা বানানোর জন্য যতগুলো উপাদান ব্যবহার করা হয়, প্রতিটি ই খুব ই পুষ্টি গুন এ সমৃদ্ধ।
১) পিঠা সবগুলো ই শক্তি বাড়ায়।
২) খেজুর এর রস এবং গুড় এ প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
৩) নারিকেল ওজন কমাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪) দুধ একটি আদর্শ সুষম খাদ্য। সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে এতে।
৫) বিভিন্ন মশলা তে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
শীতের পিঠা সবগুলোই খুবিই বৈচিত্র্যময় স্বাদে, আকারে এবং বানানোর পদ্ধতিতে। আপনি নিজেও বানাতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন অনন্য স্বাদের সব পিঠা।
ছবি:সংগৃহীত।
মন্তব্য লিখুন