অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ঔষধি ফল আমলকী। এই ফল কে বলা হয় ভিটামিন সি এর আধার।দেশের প্রায় সব জায়গায় ই আমলকী পাওয়া যায়। আমরা সকলেই এই ফল খেয়েছি।
কখনো ভেবে দেখেছেন কী, যখন আমরা কিছু খাচ্ছি, তখন ঐ খাবার এর স্বাদ একরকম আবার তা খাওয়ার পরে পানি পান করলে স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা খুবই অদ্ভুত, তাই না? ভাবছেন এ আবার হয় নাকি? হ্যাঁ, হয়। তাহলে আজই একবার নিজে থেকে পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
প্রথম এ আপনি আমলকী খেলেন, আপনার মুখে টক বা কষ স্বাদ অনুভব করলেন, এবার আপনি পানি পান করলেন, কিন্ত হঠাত করেই টক বা কষ চলে গেল আর মুখে খুব সুন্দর একটি স্বাদ “মিষ্টি” অনুভব করলেন। তাহলে চলুন, আমরা এর কারন জেনে নিই।
আমলকী:
অত্যন্ত গুনাগুনে পরিপূর্ণ একটা ফল, আমরা কম বেশি খেয়ে থাকি। বাংলাদেশ এ প্রায় সব জায়গায়ই পাওয়া যায়। আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে এই ফল পাওয়া যায়। সাধারণত বীজ এর মাধ্যমে বংশবিস্তার করে আমলকী গাছ,বর্ষাকালে এই গাছ লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আমলকী এর বৈজ্ঞানিক নাম “ফাইলান্থাস এম্বলিকা”। আমলকী ফল এর রঙ হালকা সবুজ ধরনের।
আমলকী খেয়ে পানি পান করলে মিষ্টি স্বাদ লাগার কারণ:
আমলকীতে থাকা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এর মধ্যে এসকরবিক এসিড এবং গ্যলিক এসিড উল্লেখযোগ্য । এই এসিডগুলো জৈব যৌগ এর জৈব এসিড এর অন্তর্ভুক্ত। কয়েকটি শব্দ এর সাথে আগে পরিচিত হই আমরা।
জৈব যৌগ এর ধারণা :
মানব দেহ এবং প্রাণীদের শরীর মূলত জৈব যৌগ এর সমন্বয় এ গঠিত। সাধারণত কার্বন এবং হাইড্রোজেন মিলে যে যৌগ গঠিত তাকেই আমরা জৈব যৌগ বলছি। এ যৌগ সমূহ অনেক জৈব রাসায়নিক কাজ সম্পন্ন করে থাকে।
জৈব এসিড বলতে যা বোঝায়:
জৈব এসিড হচ্ছে সে সকল অম্ল বা এসিড যা জলীয় দ্রবনে প্রোটন প্রদান করে।অনেক ধরনের জৈব এসিড রয়েছে। এক এক ধরনের এসিড ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদন করে
এসকরবিক এসিড নাকি ভিটামিন -সি?
এসকরবিক এসিড হচ্ছে সেই এসিড যাকে আমরা সচারাচর ভিটামিন -সি নামে চিনি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই এসিড আমাদের শরীরের কোলাজেন এবং অভ্যন্তরীণ কোষ এর জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই আমাদের নিয়মিত ভিটামিন -সি গ্রহণ করা অতীব জরুরী।
গ্যালিক এসিড কী?
গ্যালিক এসিড হচ্ছে ট্যানিক এসিড এর মনোমার।
ট্যানিক এসিড কী?
এই ট্যানিক এসিড এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে “চা”।এই দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় হলো চা। আমরা এ পানীয় পান করার সময় অবশ্যই খেয়াল করেছি যে, চা এর স্বাদ আমাদের মুখে হালকা তিক্ত বা কষ এর মতো অনুভব করি। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছে “ট্যানিক এসিড”।পৃথিবীর সব গাছের পাতার তিক্ত বা কষ এর জন্যও এই ট্যানিক এসিড এর প্রভাব রয়েছে। অনেকগুলো গ্যালিক এসিড পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে পলিমার অনু গঠন করে যার নাম “ট্যানিক এসিড”।
গ্যালিক এসিড এর ধর্ম:
আমরা যখন আমলকী খাই, তখন গ্যালিক এসিড এর প্রভাব এ আমরা ততক্ষনাত তিক্ত বা কষ এর স্বাদ উপলব্ধি করে থাকি। কিন্ত এই এসিড এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রধান ধর্ম হচ্ছে, এসিডটি এসিড বা অম্লীয় পরিবেশ এ তিক্ত বা কষ এর মতো স্বাদ এর প্রকাশ করে এবং যখন নিরপেক্ষ পরিবেশ পাবে তখন মিষ্টি স্বাদ এর প্রকাশ ঘটাবে। আর আমরা জানি যে, পানির পিএইচ সাত (৭) যা নিরপেক্ষ পরিবেশকে বুঝিয়ে থাকে। আর, এর জন্যই আমলকী খাওয়ার পরে পানি পান করলে মিষ্টি স্বাদ লাগে।
আরও পড়ুনঃ
সুস্বাস্থ্য গঠনে সঠিক খাদ্যাভাস এর গুরুত্ব
ডায়াবেটিস কি? কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধির কৌশল সমূহ
আমলকী খাওয়ার উপকরিতা:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২. ত্বক এর উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে এবং সুন্দর হয় আরো বেশি।
৩. চর্মরোগ দূর করে।
৪. চোখ ভালো থাকে।
৫. খাবার রুচি বেড়ে যায়।
৬. ডায়াবেটিস, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৭. মানসিক চাপ দূর হয়ে যায়।
৮. চুল পড়ে যাওয়া কমে।
৯. শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে।
১০. মুখের রোগ নিরাময় হয়।
ভেষজ গুনাগুনে ভরপুর আমলকী ফল আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অতীব জরুরী।