বিশ্বরেকর্ড তৈরির মাধ্যমে গিনেস বুকে নাম ওঠানো নতুন কিছু না বরং বেশ গর্বের একটি বিষয়। তাইতো কত মানুষ কত রকম অদ্ভুত কাজ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছেন। এমনই ১২ টি অদ্ভুত বিশ্বরেকর্ড নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখাটি-
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
মনে করুন আপনার বাসায় কোনো অনুষ্ঠানের জন্য প্রচুর বেলুন ফুলানোর দরকার ঘর সাজানোর জন্য। এর জন্য আপনি নিশ্চয়ই পাম্পার ভাড়া করবেন। হাতের কাছে পাম্পার না পেলে আপনি কিন্তু হান্টার এওউইনকে ভাড়া করতে পারেন। কারণ তিনি ঘণ্টায় প্রায় ৯১০টি বেলুন ফুলাতে পারনে। এক ঘন্টায় ৯১০ টি বেলুন ফুলিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। এবং এখন পর্যন্ত কেউ তার এই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। বেলুন ফুলিয়ে বিশ্বরেকর্ড করা যায় এমন কখনো ভেবেছিলেন কি?
মনে করুণ আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে বাজারে গেলেন টেডিবিয়ার কেনার জন্য। কিন্তু আপনার সন্তানের কোনো টেডিবিয়ার ই পছন্দ হচ্ছেনা কারন সেখানে টেডিবিয়ারের সংগ্রহ কম। তাহলে মন খারাপ না করে আপনি তাঁকে নিয়ে যেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডেকোটার “জ্যাকি মিল”এর কাছে। কারণ জ্যাকি মিলের সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রায় আট হাজার ২৫টি টেডিবিয়ার।
অনেকদিন থেকে তিনি তার এই সংগ্রহের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এসেছেন। তার দাদিমার দেওয়া টেডিবিয়ার টি ছিলো তার প্রথম সংগ্রহ।২০০০ সালে জ্যাকি মিল এই রেকর্ডটি গড়েন এবং এখনো কেউ তার এই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। তাই আপনি যদি চান তাহলে জ্যাকি মিল এর চেয়ে বেশি টেডিবিয়ারের সংগ্রহ তৈরি করুণ।
বর্তমানে নারীরা সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর সাথে সাথে আরো অনেক আর্টিফেশিয়াল পণ্য ব্যবহার করেন। যেমন অনেকে আর্টিফেশিয়াল চোখের পাপড়ি ব্যবহার করে থাকে। তবে চীনের জিয়ানজিয়ার চোখে আর্টিফেশিয়াল পাপড়ি পড়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। কারণ তার চোখের পাপড়ি এমনিতেই অনেক বড়।শুধু বড় না, এতটাই বড় যে, এই চোখের পাপড়ি দিয়েই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়াছেন তিনি।গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী তাঁর উপরের পাতার চোখের পাপড়ির দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ১২.৪ সেন্টিমিটার।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবার প্রয়োজন হয় খাবার। এর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। আমরা আসলে সেসব খাবারই খাই যা আমরা হজম করতে পারি। কিন্তু আমেরিকার নাতাশা বেরুস্কার নামে একজন সবথেকে লম্বা তলোয়ার গিলে ফেলার রেকর্ড গড়েছেন ( গিলে ফেলেছেন বলতে মুখের ভেতর থেকে গলার মধ্যে দিয়ে পেট পর্যন্ত ঢুকিয়ে আবার বের করেছেন)। তিনি ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ৫৮ সেন্টিমিটার লম্বা তালোয়ার গিলে বের করার এই রেকর্ড করেছেন।
কয়েকজন বন্ধু একসাথে হলেই হয়তো আমরা বারবিকিউ পার্টি করে থাকি। এতে করে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোও হলো সেই সাথে পেট পুজোও হলো। কিন্তু আপনি কি কখনো বারবিকিউ তৈরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার কথা ভেবেছেন? ভাবা উচিত ছিলো। কারণ, বারবিকিউ তৈরি করে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছে।
প্রথম ২০১১ সালে, ১৩ টন ওজনের বারবিকিউ তৈরি করে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে আর্জেন্টিনা। ২০১৭ সালে,আর্জেন্টিনার এই রেকর্ড ভাঙে উরুগুয়ে। তারা ২০০ জন বাবুর্চি মিলে ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ৬০ টন কাঠ পুড়িয়ে সাড়ে ষোল টন গরুর মাংসের বারবিকিউ তৈরি করেন, যা বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম বারবিকিউয়ের রেকর্ড দখল করে নিয়েছে।
আমরা মানুষেরা যেমন বিচিত্র তেমনি বিচিত্র আমাদের কর্মকান্ড।আমরা বাহবা পাওয়ার জন্য যা কিছু করতে পারি।দরকার হলে করবে ঢুকেও বসে থাকতে পারি। যেমন টি করেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের ডেনেক জারাদকা। তিনি বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য কোনোরকম পানীয় আর খাদ্য ছাড়া একটি কফিনে বন্দী ছিলেন টানা ১০ দিন। কফিনটিকে আবার মাটির নিচে পুঁতে রাখাও হয়েছিল।শুধুমাত্র একটি ভেন্টিলেশন পাইপের মাধ্যমে কফিনের ভেতরে অক্সিজেন যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
আপনি, আমি বা আমরা সবাই, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি।আমাদের দৈনন্দিন একটা কাজ হলো দাঁত ব্রাশ করা। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন যে,দাঁত ব্রাশ করার মতো বিষয় নিয়েও বিশ্বরেকর্ড গড়া যায়?
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি, দাঁত বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি স্কুলে একত্রে ১৬,৪১৪ জন মানুষ দাঁত ব্রাশ করে। যা স্থান করে নেয় ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইয়ে।
কিছু মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য থাকে গিনেস বুকে নাম ওঠানো।এর জন্য চাইলে জীবন বাজি রাখতে পারেন তারা। যেমনটা রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টম ওয়েন। ২০০৯ সালে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার পেটের উপর দিয়ে যাতায়াত করিয়েছিলেন ৯টি ছোট পিক আপ ভ্যান, যেগুলোর ওজন ছিলো ৩,০০০-৪,০০০ কেজি! কি ভাবছেন এমন রেকর্ড গড়তে চান?
আপনারা যারা শখ করে কুকুর পোষেন তারা অনেকেই হয়তো শখের বশে কুকুরকে কাপড় পরিয়ে থাকেন। কিন্তু কখনো কি বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য কাপড় পরিয়েছেন? বা কুকুরকে কাপড় পড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড করা হয়েছে, এমনটা শুনেছেন? ফ্লোরিডার ডানেডিনে এমন একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালে। ৪২৬ জন ব্যক্তি তাদের প্রিয় পোষা কুকুরকে রঙিন পোশাক পরিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন গিনেস বুকে নাম লেখাবার জন্য।
ভয় পাবেন না মারমাইট হলো ব্রিটিশদের একটি প্রিয় খাবার। তরল জাতীয় এই খাবারটি পাউরুটির সাথে খাওয়া হয়।খাবারটি অনেক মজাদার কিন্তু একসাথে অনেকটা পরিমাণে খাওয়া কষ্টকর।কিন্তু এই মারমাইট খেয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন আন্দ্রে ওরটলফ নামে এক ব্যক্তি। এক মিনিটে তার চেয়ে বেশি মারমাইট খেতে পারেন এমন লোক এখনো পাওয়া যায়নি। তাই এক মিনিটে সবচেয়ে বেশি মারমাইট খাওয়ার বিশ্বরেকর্ডটি তাঁর দখলে।
আমরা সবাই জানি যে, জুতা তৈরি হয় পায়ের পাতার মাপে। কিন্তু এটা জানেন কি?তুরস্কের একটি জুতার কোম্পানি পৃথিবীর বৃহত্তম জুতা তৈরি করেছেন যার মধ্যে প্রায় ৩০ জন মানুষ অনায়সে দাঁড়াতে পারে। জুতাটি, ৫.৫ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.২৫ মিটার প্রস্থ আর ১.৮৩ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট। তুরস্কের এই জুতাটি বিশ্বের বৃহত্তম জুতা হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে।
ফ্রান্সের কড্রি শহরে একটি বিয়েতে, কনের জন্য একটি সাদা গাউন নির্মাণ করা হয়েছে যার ঝুলের দৈর্ঘ্য ৮,০৯৬ মিটার। গাউনটি তৈরি করতে ১৫ জন কর্মীর প্রায় ২ মাস সময় লেগেছিলো। গাউনটির দৈর্ঘ্য এত বেশি যে এর দ্বারা মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গকেই প্রায় ঢেকে ফেলা যাবে।
প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে কেউ না কেউ গড়ে চলেছে গিনেস বিশ্বরেকর্ড। আবার কেউ হয়তো পুরনো রেকর্ডটি ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে। তাই চাইলে হয়তো আপনি ও একটি বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারেন অথবা কারো রেকর্ড ভেঙে
নিজের বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারেন।
মন্তব্য লিখুন