সামুদ্রিক শৈবাল️ হয়তো সকলেরই চেনা। শৈবাল হলো সমুদ্র এবং মহাসাগরের মতো জলাশয়ে উত্থিত এক ধরনের উদ্ভিদ।অনেকে হয়তো এই শৈবালকে সমুদ্রের সাধারণ উদ্ভিদ বা আগাছা বলে হেয় করে থাকতে পারেন । কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে, এই শৈবালের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ধরনের খাদ্য পুষ্টিগুন। শৈবালের এই খাদ্যগুন নিয়েই আজকের লেখা। চলুন তবে ডুব দিই শৈবালের মাঝে।
সাধারণত সবুজ রঙের শৈবাল আমাদের কাছে বেশি পরিচিত তবে লাল ,বাদামী এবং কালো রঙের শৈবাল ও দেখতে পাওয়া যায়।সমুদ্র সৈকত এবং সমুদ্রের তলদেশে জন্মায় এই শৈবাল। এই শৈবালের কোনো কোনোটির আকার এতো বেশি ছোট যে দেখার জন্য মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হয়।আবার কোনো কোনোটি অনেক বড় আকারের হয়।শৈবালে সাধারণত অনেকগুলি স্বাস্থ্যকর খনিজ এবং ভিটামিন (A, B, C এবং K ইত্যাদি ) থাকে যা শরীরের পক্ষে জরুরী।
খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক শৈবালের উপকারী গুনের বর্ণনা শুরুর পূর্ব আগে বলি কিভাবে খেতে হয় এই শৈবাল।ডায়েটে সামুদ্রিক শৈবাল যোগ করা খুব সহজ। কাঁচা এবং রান্না উভয় পদ্ধতিতে খাওয়া যায় শৈবাল। সুশিতে ব্যবহৃত শুকনো সবুজ নুরির চাদরটি শৈবালের তৈরি হয়ে থাকে যেটি সুসির জন্য একটি সুস্বাদু মোড়ক তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও, অনেক কম্পানি সামান্য তেল এবং লবণ দিয়ে ভেজে শৈবাল বিক্রি করে, যা নোনতা লোভকে পূরণ করার উপযুক্ত উপায় হতে পারে।টোস্টেড সামুদ্রিক শৈবাল বা সামুদ্রিক শৈবালগুলি ভাতের সাথে খাওয়া যেতে পারে। আবার চাইলে সালাত কিংবা ভেজিটেবল স্যুপ হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে সামুদ্রিক শৈবাল।
সামুদ্রিক শৈবাল, আয়রন এবং আয়োডিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভিন্ন ভিন্ন সামুদ্রিক শৈবালে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি এবং খনিজ থাকতে পারে।তবে সাধারণভাবে, এই সামুদ্রিক শৈবাল বা শেত্তলাগুলি দেহের ভিটামিন এবং খনিজের অভাব পূরণ করতে পারে কোনো ক্যালরি না বাড়িয়েই।
সামুদ্রিক ড্রাগস ট্রাস্টেড সংস্থার এক জরিপ থেকে জানা যায় যে, সামুদ্রিক শৈবাল প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ফাইবারমিনেরাল পলিউন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এর এক বৃহৎ উৎস।
জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড সাইকোলজির এক গবেষনায় জানানো হয়েছে যে, সামুদ্রিক শৈবালগুলিতে বিভিন্ন সহায়ক পুষ্টি আছে যার মধ্যে রয়েছে: ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা শরীরকে জারণ চাপ থেকে রক্ষা কর।
থাইরয়েড গ্রন্থি শক্তি উতৎপাদন, বৃদ্ধি এবং কোষ মেরামতের জন্য হরমোন নিঃসরণ করে । আর এই থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিকভাবে কাজ করার জন্য আয়োডিন প্রয়োজন। তবে একজন ব্যক্তির দেহে কি পরিমাণ আয়োডিন প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার থাইরয়েডের অবস্থার উপর।আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েডিজমের হতে পারে।
সমুদ্রে জন্মানো এই শৈবাল গুলো আয়োডিনের এক বিশাল সম্ভার।খাদ্য তালিকায় বা ডায়েটে শৈবাল যুক্ত করলে, খুব সহজেই আয়ডিনের অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে।
উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস পরিচালনায় সাহায্য করে,এর কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তের গ্লুকোজ লেভেল এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ডায়েটে সামুদ্রিক শৈবাল যোগ করলে যেকোনো ব্যক্তির দেহে ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে পারবে কোনে ক্যালোরি বৃদ্ধি ছাড়াই।
এছাড়াও সামুদ্রিক শৈবালের জৈব যৌগগুলি ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলিকে হ্রাস করতে পারে যেমন প্রদাহ, উচ্চ ফ্যাট স্তর এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা।
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সামুদ্রিক শৈবাল গুলোর মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। এই দ্রবণীয় ফাইবারগুলি শরীরে পিত্ত অ্যাসিড বা লবণের সাথে আবদ্ধ থাকে।এরপরে শরীর এই উপাদানগুলি প্রতিস্থাপনের জন্য কোলেস্টেরল ব্যবহার করে। যার ফলে মোট কোলেস্টেরলের প্রায় ১৮ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।অনেক ধরণের শৈবাল আছে যাতে উচ্চ মাত্রা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা সময়ের সাথে সাথে হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষেও সহায়তা করে।
যারা ওজন হ্রাস করার চেষ্টায় আছেন, তাদের খাবার তালিকায় সামুদ্রিক শৈবাল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শৈবালে থাকা ফাইবার ওজন হ্রাস করতে উপকারী হতে পারে। ফাইবার কোনও ব্যক্তিকে পূর্ণ বোধ করতে সহায়তা করে তবে এতে খুব কম বা কোনো ক্যালোরি নেই।
মেরিন ড্রাগস ট্রাস্টেড উতৎসের সমীক্ষা অনুসারে, প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার পেট ফাঁকা হতে দেরি করে। ফলস্বরূপ, পেট দীর্ঘ সময় ধরে মস্তিষ্কে ক্ষুধার সংকেত প্রেরণ করতে পারে না। যা অতিরিক্ত খাওয়া রোধে সহায়তা করতে পারে।
ডায়েটে সামুদ্রিক শৈবাল যোগ করার সময় কয়েকটি বিষয় অবগত থাকা উচিৎ। অতিরিক্ত আয়োডিন সেবনে গলা ভারী হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত আয়োডিন পরিশোষন পাকস্থলীর জন্য ভালো নয়। কিছু কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালে ভারী ধাতুর (অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং সীসা) উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়েছে। যা স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই শৈবাল গ্রহণের পূর্বে তার উৎস এবং গুনগত মান যাচাই করে নেওয়া উচিৎ।
তথ্য সূত্রঃ www.medicalnewstoday.com
মন্তব্য লিখুন