মহাকাশ এবং এর জ্যোতিষ্ক সমূহকে জানার আগ্রহ মানুষের বরাবরই একটু বেশি। বর্তমানে মহাকাশ গবেষণায় নাসার পাশাপাশি ভারতের ইসরো (ISRO) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তারই ধারাবাহিকতায় সকল শক্তির আধার সূর্যকে বিস্তৃত পরিসরে জানতে শীঘ্রই একটি স্যাটেলাইট প্রেরণ করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। আদিত্য-L1 (Aditya-L1) একটি মহাকাশগামী মিশন যা মূলত সূর্যকে পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হবে।
ইসরো এবং ভারতীয় আরও কিছু রিসার্চ সেন্টার একত্রে এ স্যাটেলাইটটি তৈরি করবে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একে উৎক্ষেপণ করার কথা। আদিত্য-L1 হবে ভারতের প্রথম সোলার মিশন। ৫ বছর সূর্যকে পরীক্ষণ করার পরিকল্পনায় আদিত্যকে প্রেরণ করা হবে যা ইসরো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবে। সম্পূর্ণ মহাকাশযানটির ভর ১,৫০০ কেজি যাতে পেলোড থাকবে প্রায় ২৪৪ কেজি ভরের। আদিত্য-L1 -কে উৎক্ষেপণ করা হবে সতীশ-ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে।
শুরুর গল্প:
প্রথমবারের মত আদিত্যর চিন্তাভাবনা করা হয় ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে। শুরুতে একে কেবল একটি ৪০০ কেজি ভরের সাধারণ মানের স্যাটেলাইট হিসেবে ভাবা হয়েছিল যাতে শুধুমাত্র একটি করোনাগ্রাফ থাকবে সূর্যের বহির্ভাগের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
এমনকি একে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে যা পৃথিবী থেকে মাত্র ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি রুপি বরাদ্দ করার পর মিশনটিকে বিস্তৃত করা হয়।
বর্তমান পরিকল্পনা মতে মিশনটির লক্ষ্য হবে সূর্য এবং মহাকাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা। যেহেতু এ স্যাটেলাইটটি স্থাপন করা হবে লগর্যাঞ্জিয়ান পয়েন্ট L1 এ, তাই এর নামকরণ করা হয় “আদিত্য-L1“। জুলাই, ২০১৯ এর তথ্যমতে মিশনটির জন্য উৎক্ষেপণ খরচ ছাড়াই ৩৭৮.৫৩ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে।
Aditya-L1 উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য:
আদিত্য-L1 (Aditya-L1) মিশনটিকে উৎক্ষেপণ করা হবে L1 পয়েন্টকে ঘিরে থাকা একটি কক্ষপথে যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১,৫০০ কেজি ভরের এ স্যাটেলাইটটি ৭টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির পেলোড বহন করবে যাদের কাজ হবে সূর্যকে এবং এর কাছাকাছি পরিবেশ তথা সোলার করোনাকে যথাসম্ভব গভীরভাবে জানা।
অর্থাৎ এ মিশনের কিছু কাজ হবে সোলার করোনার তাপ, চৌম্বকীয় শক্তি, সৌর বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ, সৌরঝড়, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ, পৃথিবীর চারপাশের মহাকাশ পরিস্থিতি ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা।
আদিত্য নামক এ স্যাটেলাইটটি সূর্যের ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনাল এরিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। এছাড়াও পেলোড হিসেবে প্রেরিত একটি যন্ত্র সৌর শক্তি ও L1 কক্ষপথে এর বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করবে। এমনকি একটি ম্যাগনেটোমিটার সূর্যের চৌম্বকীয় ফিল্ডের চুম্বক পদার্থের বৈচিত্র্যও পর্যবেক্ষণ করবে।
আরও পড়ুনঃ
অলিম্পাস মন্স: মঙ্গলের বৃহৎ আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জানুন
দা গ্রেট রেড স্পট: তিনশো বছর ধরে ঘুরতে থাকা অতিকায় দানবীয় ঘূর্ণিঝড়
আদিত্য-L1 এর এই মিশনটি আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিবে। সোলার ফিজিক্সে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রমাণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে সূর্যের উচ্চস্তরের আবহাওয়া অত্যন্ত উত্তপ্ত (১,০০০,০০০ কেলভিন)। অপরদিকে নিম্নস্তরের আবহাওয়া অনেক কম উত্তপ্ত (৬,০০০ কেলভিন)।
যে কারণে আমরা এখনো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনা যে সূর্যের বিকিরণ ঠিক কিভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করে। এ মিশনটি সূর্যের নিকটবর্তী বিভিন্ন পর্যায়ের অণুসমূহের ছবি পর্যবেক্ষণ করে এদের শক্তির বিকিরণ ও পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করবে।
সুতরাং আদিত্য-L1 নামক ভারতের প্রথম সোলার মিশনের মাধ্যমে আমরা সূর্যকে আরও বিস্তৃত পরিসরে জানতে পারবো এবং নতুন জ্ঞানের আলোকে নিজেদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবো।