আজকের দিনে প্রচুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ভীড়ে ফেসবুক বাদে খুব কম মানুষই বাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর সাথে পরিচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিষ্ঠালগ্নে কখনও ভাবা হয়নি এগুলো বর্তমান সমাজ বিনির্মাণের অংশীদার হবে, সমাজের শিকড়ে এত গভীরভাবে বিস্তার লাভ করবে।
এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে কেউ নিজের মেধা ও মনন প্রকাশ করছে। কেউ নিজের ব্যবসায়িক কাজ কর্ম সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। কেউ বা নিজের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।
এত কিছুর ভিড়ে কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আসক্তও হয়ে পড়ছে।
অসংখ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে যেসব বিশেষায়িত কোনো কাজের জন্য নির্মিত। যেমন- ইন্সটাগ্রাম ছবি শেয়ারিং সাইট, সাউন্ডক্লাউড মিউজিক শেয়ারিং সাইট। এরকম কিছু দরকারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আজকে কথা বলা যাক।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ইন্সটাগ্রাম (Instagram)
আমরা অনেকেই এই সাইটটির সাথে পরিচিত হলেও যে কয়জন মানুষ ফেসবুক চিনে,তাদের অনেকেই এটি চিনবেননা। আমার লেখা মূলত তাদের জন্যই। ইন্সটাগ্রাম হলো একটি জনপ্রিয় ছবি এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন।
তবে, ১৫ সেকেন্ডের বেশি ভিডিও সরাসরি ইন্সটাগ্রামে আপলোড করা যায়না। কেভিন সাইস্ট্রম,মাইক ক্রিঞ্জার এর উদ্ভাবক।এর উন্নয়নাকরী হিসেবে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়োজিত আছে।
প্রাথমিক সংস্কর উন্মুক্ত হয় ২০১০ সালে। ১৫ সেকেন্ডের বেশি ভিডিওর ভিউ করার জন্য ইনস্টাগ্রামের নিজস্ব বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যার নাম “আইপি টিভি”।
বৈশ্বিক সমীক্ষা অনুসারে, দৈনিক ৩০০ মিলিয়নের অধিক মানুষ ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন। এছাড়া,রোজ গড়ে ৭০ মিলিয়নের মত ছবি,ভিডিও শেয়ারিং হয় সাইটটিতে।
সাইটটির অ্যালগরিদম মানসম্মত হওয়ায় ছবির মূল রেজ্যুলেশন ধরে রাখমে সক্ষম। এ কারণে ফটোগ্রাফারদের কাছে অনেক পছন্দের একটা যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম।
ইন্সটাগ্রামে শুধুু ছবি, ভিডিও শেয়ারিং করা যায় তা কিন্তু নয়! রয়েছে চ্যাটিং সুবিধা, ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে যোগাযোগের সুবিধা।
ইন্সটাগ্রামে ছবির ভিউ বাড়াতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার যেমন- ছবি আপলোডের পর অবশ্যই লোকেশন ব্যবহার করতে হবে, ছবি সংশ্লিষ্ট ট্রেন্ডিং হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নতুন বন্ধুদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। ফটোগ্রাফাররা খুব সহজেই বিদেশি ফটোগ্রাফারদের সাথে একটা সংযোগ সৃষ্টি করতে পারেন সাইটটি ব্যবহার করে।
Playstore download link: Instagram
টাম্বলার (Tumblr)
টাম্বলার মূলত একটি মাইক্রোব্লগিং সাইট।এর প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড কার্প। ২০০৭ সালে টাম্বলার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে ইয়াহু টাম্বলারকে কিনে নেয়।
বর্তমান সময়ে ৫০০ মিলিয়নের অধিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে এখানে। তারা প্রতিনিয়ত ব্লগিং করে তাদের অভিমত ব্যক্ত করে চলেছে।এখানে শুধু ব্লগিং ই করা যায় তা ঠিক নয়।
অনেকে তাদের প্রোডাক্টের প্রোমোশন করে থাকে, ক্রয় বিক্রয় ও হয়ে থাকে। প্লেস্টোর থেকে ১০০ মিলিয়ন+ বার জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির অ্যাপ নামানো হয়েছে।
আপনি যদি মাইক্রোব্লগিং এর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন, অন্যের ব্লগিং পড়তে চান, নিজের অভিমত মুক্ত কোনো প্লাটফর্মে শেয়ার করতে চান, তাহলে টাম্বলার নিসন্দেহে সঠিক একটি অ্যাপ্লিকেশ সেক্ষেত্রে।
Playstore download link: Tumblr
টুইটার (Twitter)
টুইটার ফেসবুকের মতই আরেকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকের মত টুইটারে যত ইচ্ছা তত শব্দে স্ট্যাটাস দেওয়া যায়না।
টুইটারে সর্বোচ্চ ২৮০ শব্দের স্ট্যাটাস গ্রহণযোগ্য যেটাকে টুইটারের পরিভাষায় “টুইট” বলে। টুইট করকর জন্য সরাসরি টুইটার এর ওয়েবসাইট ব্যবহার করাও যায়।
এছাড়া রয়েছে যেকোনো প্লাটফর্মে ব্যবহারের উপযোগী অ্যাপ্লিকেশন। টুইটার ও মূলত টাম্বলারের মত একটি মাইক্রোব্লগিং সাইট।টুইটারের সদস্যরা অন্য সদস্যদের টুইট পড়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। এই কাজটিকে বলা হয় অনুসরণ করা।
কোনো সদস্যের টুইট পড়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছে, তাদেরকে বলা হয় অনুসরণকারী।২০০৬ সালের ২১ মার্চ জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং এই সাইটটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
টুইটারের সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত।জ্যাক ডোরসে, নোয়া গ্লাস, বিয স্টোন, ইভান উইলিয়ামস কে একচ্ছত্রভাবে টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১৫ সালের সমীক্ষা অনুসারে, এই প্রতিষ্ঠানে ৩৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযুক্ত ছিল। ২১ মার্চ ২০০৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠ হলেও সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য একই বছরের জুলাই মাসে একে উন্মুক্ত করা হয়।
বিশ্বের দ্বিতীয় বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার। ১৭.৫ কোটির বেশি সক্রিয় গ্রাহক নিয়ে টুইটার এ অবস্থান ধরে রেখেছে।খুব সহজেই আপনি আপনার টুইটার একাউন্ট খুলে ফেলে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির নিয়মিত ব্যবহারকারী হয়ে উঠতে পারেন।
Playstore download link: Twitter
হোয়াটস অ্যাপ (Whats App)
বার্তা আদান প্রদানের এই অ্যাপটি সর্বসাধারণের কাছে মোটামোটি পরিচিত। বিশেষ এনক্রিপশন ব্যবস্থা থাকায় ডাটা সহজে চুরির সম্ভাবনা থাকেনা বলে যারা নিরাপদ মাধ্যম ব্যবহার করে যেকোনো ধরণের বার্তা, ছবি প্রেরণ করতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত একটি মাধ্যম হলো হোয়াটস অ্যাপ।
উইকিপিডার তথ্যমতে, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার (সংক্ষেপে হোয়াটসঅ্যাপ) সর্বাধিক জনপ্রিয় মেসেজিং এপ ও ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল পরিষেবা ।
প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যাবহারকারী রয়েছে এই এপস-টির যা বর্তমানকালের সমধর্মী অন্য কোনো এপস-এর থেকে বেশী। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনে এই মেসেঞ্জার ব্যবহার করা যায়।
শুধু চ্যাটই নয়, এ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছবি আদান-প্রদান, ভিডিও ও অডিও মিডিয়া বার্তাও আদান-প্রদান করা যায়।
এটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।বর্তমানে ফেসবুকের মালিকানাধীন এই অ্যাপটি সর্বসাধারণের নিরাপদ ডাটা আদান-প্রদানের আস্থার জায়গা অর্জন করে নিয়েছে।
Playstore download link: Whatsapp
স্কাইপ (Skype)
স্কাইপ মূলত ভিডিও কলিং অ্যাপ।এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে পরস্পরের সাথে ভয়েস, ভিডিও এবং তাৎক্ষণিক বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে।
একজন স্কাইপ ব্যবহারকারী অন্য স্কাইপ ব্যবহারকারীকে বিনামূল্যে কল করতে পারে। ২০১১ সালে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ৮·৫ বিলিয়ন ডলারে স্কাইপ লিমিটেডকে কিনে নেয়।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৫টি ধ্বংসাত্বক কম্পিউটার ভাইরাস
স্কাইপ ব্যবহার করে দূরে থাকা অবস্থায় তাৎক্ষণিক জরুরি মিটিং সম্পন্ন হচ্ছে বর্তমান সময়ে, ডাক্তার রোগিতকে টেলিমেডিসিন সেবা দুতে পারছে এবং ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের সাথে পগাশোনর ব্যপারে আলাপচারিতা করতে পারছে।
স্কাইপ ব্যবহারের ফলে স্পষ্ট এবং বাস্তব সময়ে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথেই যোগাযোগ সম্ভব ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যমে। স্কাইপকে ৩জি প্রযুক্তির মোবাইলে থার্ড পার্টি ভিডিও কলিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
Playstore download link: Skype
ভাইবার (Viber)
ভাইবার ও স্কাইপের মত একটি ভিডিও কলিং পরিষেবা অ্যাপ। ভাইবারের মাধ্যমে ভিডিও,অডিও দুই ধরণের কলিং পরিষেবাই লাভ করা সম্ভব।
এই অ্যাপটিও বিশেষ এনক্রিপশন ব্যবস্থা অবলম্বন করায় ব্যবহারকারীদের তথ্যের যথাযত সুরক্ষা দিয়ে থাকে।২০১০ সালে এটির প্রথমিক সংস্করণ উন্মুক্ত হয়। সি, সি++ এবং পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে এই অ্যাপটি নির্মাণ করা হয়েছে।
Playstore download link: Viber
স্ন্যাপচ্যাট (SnapChat)
স্ন্যাপচ্যাট ছবির মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করার উদ্দ্যেশ্যে নির্মিত মজার একটি অ্যাপ। শুধুমাত্র ছবি ব্যবহার করে বার্তা প্রেরণের এই মজার আইডিয়াটি প্রথম ইভান স্পাইজেলের মাথায় আসে। তিনিই স্ন্যাপচ্যাটের মূল উদ্ভাবক। এর প্রাথমিক সংস্করণ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উমুক্ত হয়।
এই অ্যাপটি নিচের ভাষাগুলো উপলব্ধ করতে সক্ষমঃ
ইংরেজি, আরবী, চাইনিজ (সাধারণ), ড্যানিশ, ডাচ, ফিনল্যান্ডীয়, ফ্রেঞ্চ, রোমানিয়ান, জার্মান, গ্রিক, ইন্দোনেশিয়ান, ইটালিয়ান, জাপানিজ, কোরিয়ান, নরওয়েজিয়ান (Bokmål), পোলিশ, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, সুইডিশ, তুর্কি, রাশিয়ান।
স্ন্যাপচ্যাটের কয়েকটি প্রধান বিষয় সমূহের মধ্যে একটি হল ছবি এবং বার্তা সমূহ প্রবেশযোগ্য হওয়ার আগে পর্যন্ত খুব কম সময়ের জন্য আয়ত্তাধীন থাকে। বর্তমানে “স্টোরিস” নামক নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত করেছে অ্যাপটি।
এছাড়াও “ডিসকভার” নামক একটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে যাতে বিভিন্ন পন্যের ব্রান্ড সমূহ বিজ্ঞাপন আকারের বিনোদনও প্রদর্শন করে থাকে।
Playstore download link: SnapChat
পিন্টারেস্ট (Pinterest)
পিন্টারেস্ট মূলত ফটো শেয়ারিং সাইট। ভালো রেজ্যুলেশনের ছবি শেয়ারিং এর পাশাপাশি ডাউনলোডের ও সুযোগ রয়েছে এখান থেকে। আজ থেকে ১০ বছর আগে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সাইটটি চালু করা হয়।
Playstore download link: Pinterest
লিঙ্কডইন (LinkedIn)
লিঙ্কডইন সম্পূর্ণ ভিন্নধারার একটি অ্যাপ্লিকেশন। এটি মাইক্রোসফটের অধীনস্থ সামাজিক যোগাযোগের একটি ওয়েবসাইট। প্রফেশনাল অ্যাপ হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে এর।
২০০২ সালের ৫ মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৩ সাল থেকে এটি বৈশ্বিকভাবে উন্মুক্ত হয়। ২০১৩ সালের হিসাব অনুসারে, তাদের ২০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারী রয়েছে।
লিঙ্কডইন মূল ক্যারিয়ার সচেতন মানুষদের জন্য একটি যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার সংশ্লিষ্ট বিষয় শেয়ার করা, সংশ্লিষ্ট সেক্টরের নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং সর্বোপরি নিজের সিভিকে সমৃদ্ধ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য লিঙ্কডইন আইডি থাকা অবশ্যই জরুরি।
Playstore download link: Linkedin
সাউন্ডক্লাউড (SoundCloud)
সাউন্ডক্লাউড অনলাইন অডিও স্ট্রিমিং এবং শেয়ারিং অ্যাপ। সঙ্গীতপ্রেমীদের ভরসার জায়গা এবং মিলনমেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এটি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এটি স্থাপিত হয়।
আপনি এখানে আপনার নিজের রেকর্ড করা অডিও শেয়ার করতে পারবেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের শেয়ার করা অডিও শুনতে পারবেন।
আলেকজান্ডার এলহাং অ্যাপটির মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুপরিচিত। ৪০ মিলিয়ন তালিকাভুক্ত ব্যবহারকারী এবং ১৭৫ মিলিয়ন মাসিক শ্রোতা নিয়ে এই সাইটটি এককভাবে এগিয়ে চলেছে।
Playstore download link: SoundCloud
ধন্যবাদ।
ছবি: সংগৃহীত
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া