হাইব্রিড নারকেল চাষ: নারকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। এটি এমন একটি বৃক্ষ যার প্রতিটি অঙ্গ জনজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ন। তেল, গ্লিসারিন, সাবান এবং কেশ তেল উৎপাদনে নারকেল ব্যবহৃত হয়। নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশে বর্তমানে যে নারকেল চারা চাষ করা হয় তা লম্বা জাতের। সে গুলোতে ফুল আসতে ৭-৮ বছর সময় লাগে এবং বছরে ৫০-৬০ টি ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলা আমাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম।
আমাদের দেশে ৩৫কোটি নারকেলের চাহিদা আছে। অথচ উৎপাদিত হয় মাত্র ১০ কোটি নারকেল। আর এসব দিক চিন্তা করেই আমাদের দেশে আনা হয় ভিয়েতনামের নারকেলের দুটি হাইব্রিড খাটো জাত। যা আমাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম অনেকাংশে। চলুন তাহলে আজকে আমরা জানবো ভিয়েতনামের উচ্চফলনশীল হাইব্রিড নারকেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-
ভিয়েতনাম থেকে আগত খাটো জাত ২ টি হলো- সিয়াম গ্রীন কোকনাট এবং সিয়াম ব্লু কোকনাট ।
১. সিয়াম গ্রীন কোকনাট
এ জাতের ডাবের রং কিছুটা সবুজ। আকার কিছুটা ছোট।ওজন ১.২-১.৫কেজি। এ জাতের ডাবে ২৫০-৩০০মিলি পানীয় পাওয়া যায়। বছর প্রতি ফলন ধরে ১৫০-২০০টি।
২. সিয়াম ব্লু কোকনাট
এটি উদ্ভাবন করা হয় ২০০৫ সালে। এটি কৃষকদের খুবই পছন্দের চারা।রং হলুদ। ওজন১.২-১.৫ কেজি। পানির পরিমাণ ২৫০-৩০০মিলি।পানি খুবই মিষ্টি। এটি বিদেশে রপ্তানি করা যায়। ফলন ১৫০-২০০ টি।
রোপনের সময়:
জুন – সেপ্টেম্বর
রোপনের মাটি:
নিকাশযুক্ত দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি। তবে সব ধরনের মাটি নারকেল চাষের জন্য উপযোগী।লবনাক্ত মাটি ও নারকেল চারার পছন্দ।
অতি শক্ত, কাঁকর শীলাময় মাটি হলে প্রায় ১.৫ মিটার গভীর ও ১.৫ মিটার চওড়া করে জৈব সার দিয়ে ভরাট করে গাছ লাগালে গাছ ভালো- ভাবে বেড়ে উঠবে।
রোপনের দূরত্ব:
৬*৬ মিটার হিসাবে হেক্টর প্রতি ২৭৮ টি চারা প্রয়োজন। বাগান আকারে ৭মিটার দূরত্বে চারা রোপন করা যায়।
গর্ত তৈরি:
১*১*১ মিটার মাপের গর্ত তৈরি করা প্রয়োজন। তারপর এটিকে ৪-৫ দিন রোদে শুকাতে হবে।তারপর গর্তে ১৫-২০ কেজি পচা গোবর অথবা আবর্জনা পচা সার দিতে হবে।
চারা রোপন:
গর্তের মাঝখানে নারকেল চারা এমন ভাবে রোপন করতে হবে যাতে নারকেলের চারার গোড়ার অংশ মাটির ওপরে থাকে।চারা রোপনের সময় এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে চারাটি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।চারা রোপনের পর পানি দিয়ে গর্তটা ভিজিয়ে দিতে হবে যাতে সার মাটিতে মিশে যেতে পারে।
সার ও সেচ ব্যবস্থা:
চারা লাগানোর ২০ দিন পর পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ১৫ দিন পরপর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।চারা রোপনের ৩ মাস পরপর সার দিতে হবে।
চারার গোড়া থেকে ৩০ সেমি দূরত্বে ৩০-৪০ সেমি চওড়া ও ২০ সেমি গভীর নালায় সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পর ১৫-২০ লিটার পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভেজাতে হবে।
শুকনা মৌসুমে খড় বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং করে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এছাড়া নারকেল চারা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।তাই বর্ষা মৌসুমে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জল সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
বাউকুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হউন
পেঁপে চাষ -সঠিক নিয়মে উন্নত জাতের পেঁপে চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড নারকেল চারা প্রাপ্তির স্থান:
বনায়ন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন ও জনসাধারনের মাঝে গাছের চারা প্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষে বন বিভাগ কর্তৃক দেশের ৬২ জেলায় মোট ১০১টি সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র (SFNTC) এবং ৩৩৪টি সামাজিক বনায়ন বাগান কেন্দ্র (SFPC) স্থাপন করা হয়েছে।এসব নার্সারী থেকে জনগন সুলভ মূল্যে ভিয়েতনামের হাইব্রীড নারকেল চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
নারকেল অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। নারকেল গাছের পাতা থেকে ঘরের চাল, শলা, ঝাঁড়ু, গাছ থেকে ঘরের আসবাবপত্র এবং ছোবড়া থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায়। এর সুস্বাদু জল রোগীর পথ্য। এতে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনও খনিজ লবনে ভরপুর।
এটি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ ফল। একে স্বর্গীয় গাছ ও বলা হয়। ভিয়েতনামের হাইব্রিড নারকেল চারা এর ফলনও আমাদের দেশের নারকেল চারার থেকে ৩-৪ গুন।এর ফলে কৃষকরা ও অধিক লাভবান হয়য়। তাই আমাদের চাহিদা, পুষ্টিগুনের কথা বিবেচনা করে এ ভিয়েতনামের উচ্চফলনশীল হাইব্রিড নারকেল চাষ এর ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে।
ছবিঃ সংগৃহীত
ভিয়েতনাম নারিকেল বাগান এর লোকেশন কোথায়