সম্প্রতি নিউইয়র্ক ম্যানহাটনের একটি গ্রামে ৪’শ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক “মিডল কলেজিয়েট গির্জা” পুড়ে গেছে। ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার সময় এই গির্জার ঘন্টা বাজানো হয়।
তাছাড়াও প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক এবং মৃত্যুর সময়ও ঘন্টা বাজানোর রীতি রয়েছে এই গির্জায়। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে আমেরিকার ইতিহাসের সাথে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই গির্জা বা চার্চটি ৷ তো চলুন এই উপাসনালয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক৷
গির্জাটির অবস্থান ও পরিচিতি:
“মিডল কলেজিয়েট গির্জা” প্রাচীন গির্জাটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটির ৬ এবং ৭ নম্বর স্ট্রিটের মাঝে ১১২ সেকেন্ড এভিনিউতে গির্জাটির অবস্থান।
এই চারশো বছরের পুরাতন গির্জাটি প্রথম ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এটি ১৮৯১ সালে ‘Issac T. Hopper’ হাউজের সরাসরি উত্তরদিকের একটি সাইটে সংস্কার করা হয়েছিল। গির্জাটির কাঁচের জানালাগুলোতে টিফানি গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে।
এই গির্জাটির ঘন্টা “নিউইয়র্কের লিবার্টি বেল” নামে পরিচিত ছিল। কারণ ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের বিষয়টিকে উদযাপন করার জন্য এই গির্জার ঘন্টাটি বাজানো হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া আমেরিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার স্বাক্ষী ৪’শ বছরের পুরনো এই চার্চটি।
আরও পড়ুনঃ অ্যাম্বার রুম: এক চোখ ধাঁধানো ঐশ্বর্যমন্ডিত কক্ষ হারিয়ে যাবার ইতিহাস
সংস্কার ও ব্যবহার:
ঐতিহাসিক এই গীর্জাটি উত্তর আমেরিকার প্রোটেস্টেন্টদের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন বা উপাসনালয়গুলোর একটি৷ প্রোটেস্টেন্ট হলো তারা যারা খ্রিস্টধর্ম মানে কিন্তু রোমান পোপকে মেনে চলে না (রোমান ক্যাথলিকদের বিপরীত)৷ এটিকে সতেরো শতকের প্রথমদিকে ও আঠারো শতকের শেষদিকে কয়েকবার নকশাকৃত কাঁচ ব্যবহার করে সংস্কার করা হয়৷
ব্রিটিশরা যখন নিউইয়র্ক দখল করে আমেরিকার বিপ্লব যুদ্ধের সময় তখন এটিকে কারাগার, হাসপাতাল ও স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ স্বাধীনতা লাভের পরে এটি পুনরায় গীর্জা এবং পরবর্তীতে ১৮৪৪ সাল থেকে ৩০ বছর ডাকঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
এটি প্রতিষ্ঠাকারীরা ১৮৩৬ থেকে ১৮৩৯ সালের মধ্যে লাফায়েট প্লেসে একটি গীর্জা প্রতিষ্ঠা করে যেখানে ঘণ্টাটি ছিল৷ পরে সেন্ট নিকোলাসে এবং সবশেষে মিডল কলেজিয়েট গির্জায় ঘণ্টাটি স্থানান্তরিত করা হয়৷
স্থাপত্য:
এই ঐতিহাসিক চার্চটির স্থপতি ছিলেন Samuel B. Reed । এবং এটির জানালাগুলোতে Louis Comfort Tiffany এর স্টেইন্ড গ্লাস (একরকম রঙ বেড়ঙের নকশাকৃত গ্লাস) ব্যবহার করা হয়েছিল। এই চার্চটির স্থাপত্য এর ধরণ হলো ‘গোথিক রিভাইভাল’ ( ১৭৪০ দশকের শেষের দিকে ইংল্যান্ডে শুরু হওয়া স্থাপত্য শৈলী যা মধ্যযুগীয় গোথিক স্থাপত্যকে নতুন করে তুলে ধরে)৷
সম্প্রতি আগুন লাগার ঘটনা:
৫ই ডিসেম্বর, শনিবার সকালে বিখ্যাত এই চার্চটিতে অকস্মাৎই আগুন লেগে যায়। একটি ফাঁকা ভবনে আগুন লাগলে তা ছড়িয়ে পড়ে গির্জায় এবং পাশের আরও একটি ভবনে৷ ফায়ার সার্ভিসের দল পৌঁছানোর আগেই অনেকখানি পুড়ে যায় গির্জাটি। এই ঘটনায় ৪ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর দেহে আগুন লাগে কিন্তু কারও মৃত্যু হয় নি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ৮ ঘন্টার দীর্ঘ চেষ্টায় এই আগুন নিভে। টিফানি গ্লাসের জানালাগুলো আগুনের উত্তাপে উড়ে ভেঙে গিয়েছিল। চার্চের ঘন্টার (“লিবার্টি বেল”) অবস্থা কেমন তা জানা যায় নি। তবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনো তদন্ত চলছে৷ চার্চের একজন প্রবীণ মন্ত্রী এই পরিণতিকে “ধোঁয়ায় ভরা এক উদাস ভবন” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত “মিডল কলেজিয়েট গির্জা ” প্রাচীন এই গির্জাটি সেদেশের স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন৷ আমেরিকার ইতিহাসে মিডল কলেজিয়েট গির্জায় আগুন লাগার বিষয়টি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইর্য়ক শহরের ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান সহকারী জন হজেন্স এই ঘটনাটিকে “সম্পূর্ণ ক্ষতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও অনলাইন নিউজপোর্টাল