চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি, যা দিয়ে দেশের অধিকাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এটি বহু বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য একটি অর্থনৈতিক সুবিধার উৎস হয়ে উঠেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অর্থ লেনদেন ইত্যাদির মাধ্যমে এই বন্দর হয়ে উঠেছে এক ধরনের “স্বার্থকেন্দ্র”।
এই অবস্থায় যদি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব একটি স্বচ্ছ, পেশাদার এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয়, তবে সেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের একছত্র প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ফলে, তাদের জন্য অবৈধ আয়ের যে সুযোগটি এতদিন ধরে ছিল, তা হুমকির মুখে পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই, এই পরিবর্তন তাদের জন্য অস্বস্তিকর।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এই ব্যবস্থার বিপরীতে একটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ ও বিদেশি অংশীদারিত্ব আনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, যাতে বন্দর কার্যক্রম আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত হয়। এই উদ্যোগ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে হলেও, রাজনৈতিকভাবে এটি অনেকের স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।
ফলে, সংশ্লিষ্ট দলগুলো বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করে। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলে, এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা প্রচারও চালানো হয়। মূলত, এটি ছিল নিজেদের আর্থিক ও রাজনৈতিক সুবিধা রক্ষার কৌশল।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যবস্থাপনা পেশাদার ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হওয়া জরুরি। জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে—যাতে তারা বুঝতে পারে কে আসলেই দেশের উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছে, আর কারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বাধা সৃষ্টি করছে।