স্মার্টফোনের জগৎে শাওমি সুপরিচিত একটি নাম। ২০১০ সালে চীনে শাওমি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। সময়ের পরিক্রমায় কোম্পানিটি বিশ্বব্যপী বিস্তার লাভ করে। প্রসার করে তাদের বাণিজ্য। স্মার্টফোন, স্মার্ট গ্যাজেট থেকে শুরু করে নানা ধরণের মোবাইল অ্যাপলিকেশন,অভিজাত ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি তৈরী করে আসছে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে Xiaomi এর সাব ব্রান্ড হিসেবে Poco আত্মপ্রকাশ করে poco F1 ফোনের মাধ্যমে। স্মার্টফোন জগৎে সাড়া জাগানো এই সাব ব্রান্ড পরবর্তীতে Xiaomi Poco x2 ডিভাইসটি রিলিজ করে।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মোবাইলটি অফিসিয়ালি এনাউন্স করা হয় এবং ১১ ফেব্রুয়ারী রিলিজ করা হয়। ভারতে মোবাইলটি অফিসিয়ালি পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে অফিসিয়ালি ডিভাইসটি আনা হয়নি। ৬.৬ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে,৮৪.৮% স্ক্রিন টু বডি রেশিও এবং ২০৮ গ্রাম ওজনের বিশাল ডিভাইসটির খুঁটিনাটি, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স সম্পর্কে আপনাদের জানাতে যাচ্ছি।
একনজরে Xiaomi POCO X2 স্মার্টফোনটির খুঁটিনাটি
1. Body: 165.3 x 76.6 x 8.8 mm (6.51 x 3.02 x 0.35 in)
2. Weight :208 g (7.34 oz)
3. Build: Glass front (Gorilla Glass 5), glass back (Gorilla Glass 5), plastic frame SIM Hybrid Dual SIM (Nano-SIM, dual stand-by)
4. Display: IPS LCD capacitive touchscreen, 16M colors
5. Resolution: 1080 x 2400 pixels, 20:9 ratio (~395 ppi density)
6. Protection: Corning Gorilla Glass 5
7. Refresh rate: 120 Hz
8. Operating system: Android 10 Chipset Qualcomm SDM730 Snapdragon 730G (8 nm)
9. CPU Octa-core (2×2.2 GHz Kryo 470 Gold & 10.6×1.8 GHz Kryo 470 Silver)
11. GPU Adreno 618
12. Camera(main):
- Quad 64 MP, f/1.9, 26mm (wide), 1/1.72″, 0.8µm, PDAF
- 8 MP, f/2.2, 13mm (ultrawide), 1/4.0″, 1.12µm
- 2 MP, f/2.4, (macro)
- 2 MP, f/2.4, (depth)
- Features Dual-LED flash, HDR, panorama
- Video 4K@30fps, 1080p@30/120fps, 720p@960fps; gyro-EIS
13. Selfie camera:
- Dual 20 MP, f/2.2, 27mm (wide), 1/3.4″, 0.8µm
- 2 MP, f/2.4, (depth)
- Features HDR
- Video 1080p@30fps
14. Memory:
- Card slot microSDXC (uses shared SIM slot)
- Internal 64GB 6GB RAM, 128GB 6GB RAM, 256GB 8GB RAM
- UFS 2.1
15. Features:
- Sensors Fingerprint (side-mounted), accelerometer, gyro, proximity, compass
- Messaging SMS(threaded view), MMS, Email, Push Email, IM
- Browser HTML5
16.Battery:
- Type Li-Po 4500 mAh, non-removable
- Charging Fast charging 27W, 100% in 68 min (advertised)
- MISC
18. Colors: Atlantis Blue, Matrix Purple, Phoenix Red
মোবাইলটি আনবক্সিং এর পর বক্সে যা যা পাচ্ছেন
১. মোবাইল ফোন
২. ইউজার ম্যানুয়াল
৩. চার্জিং ক্যাবল
৪. এডাপ্টার
৫. ব্যাক কভার
৬. সিম ইজেক্টর টুল
স্মার্টফোনটির বিস্তারিত
মোবাইলটির দাম ইন্ডিয়ান রুপি অনুসারে ২১,১৯৯ রুপি ধরা হয়েছিলো। সময়ের সাথে দাম উঠানামা করে স্টোরেজ ভার্সন অনুসারে।বাংলাদেশে আন অফিসিয়ালভাবে মোবাইলটি বর্তমানে (সেপ্টেম্বর, ২০২০) ৬ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি স্টোরেজ ভার্সনটি ২২/২৩ হাজার টাকার আশে পাশে পাওয়া যাবে।কিনতে চাইলে যমুনা ফিউচার পার্ক,বিভিন্ন রেপুটেড মোবাইল শপ এবং বসুন্ধরা শপিং মলের কয়েকটি শপ থেকে কিনতে পারেন। কয়েকটি শপের নাম নিচে দেয়া করা হলো।
1. Sumash Tech
2. KRY International
3. Rio International
4. Raduga International
5. Phone Sell BD
6. Take & talk BD
7. Gadget & Gear
8. রহিমের দোকান
9. Veraz Official(Chittagong)
10. Gadget root BD
রিয়েল টাইম ইউজার রিভিউ
১. ডিস্প্লেঃ
এই মোবাইলটির ডিস্প্লে তে ব্যবহৃত হয়েছে IPS LCD প্যানেল যার উপড়ে রয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ এর প্রটেকশন।ডিভাইসটির পিছনের অংশেও সম্পূর্ণ গ্লাস ফিনিশিং রয়েছে। ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এই মোবাইলটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় দিক।
সাধারণত এতদিন বাজারে ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের মোবাইল পাওয়া যেতো সর্বোচ্চ এবং সকল গেম ভালো মতই খেলা যেতো।১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে আপনি স্ক্রলিং করে স্মুদলি মোবাইল চালাতে পারবেন এবং অন্য সব ডিভাইস থেকে ভিন্ন ধরণের একটা এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।সোশাল মিডিয়া ব্রাউজিং করার সময় ১২০ হার্জের ফ্লুয়েন্সি টা টের পাওয়া যাবে।
২. ব্যাটারিঃ
৪৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের শক্তিশালী লিথিয়াম পলিমার আয়নের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। বক্সে প্রোভাইড করা ২৭ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার দিয়ে চার্জ হতে ১ ঘন্টা ১৫/২০ মিনিটের মত সময় লাগে।ফোনটির চাইনিজ ভ্যারিয়েন্ট redmi k30 এর সাথে ৩০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার প্রোভাইড করা হয়ে থাকে।
১২০ হার্জে হেভি ইউজের পর মোটামোটি ৭ ঘন্টা ব্যাক আপ পাওয়া যাবে।একবার চার্জে মিডিয়াম ইউজার রা অনায়েসে একদিন পাড় করে দিতে পারলেও হেভি ইউজার,গেমারদের জন্য অন্তত দুইবার চার্জ দিতে হবে।
৩. ক্যামেরাঃ
বর্তমান সময়ে মোবাইলের বাজারে ক্যামেরা অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। মূলত, মিড রেঞ্জ সেগমেন্টের মোবাইলগুলোতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বিভিন্ন কোম্পানি ক্যামেরা ইনস্টল করে থাকে। এই ফোনটিতে ব্যাক ক্যামেরা হিসেবে রয়েছে ৪ টি ক্যামেরা। ৬৪ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড এঙ্গেল ক্যামেরা। এছাড়া রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড এঙ্গেল ক্যামেরা, ২ মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো লেন্স এবং ২ মেগাপিক্সেলের ডেপ্থ সেন্সর ক্যামেরা।
ম্যাক্রো লেন্স থাকায় যেকোনো অবজেক্টের খুব ক্লোজ শট নিতে পারবেন আপনি। যারা ন্যাচার ফটোগ্রাফি করেন কিংবা ফুড রিভিউ তৈরী করেন,তাদের বিভিন্ন সময় ক্লোজ শট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে ডিভাইসটি থেকে দারুণ ফলাফল পাবেন।
শাওমির প্রথম 64 Mp camera Redmi Note 8 Pro ডিভাইসটিতে আনা হয়। এই ক্যামেরাতে শক্তিশালি sony IMX sensor রয়েছে যা কোয়ালিটি ছবি সরবরাহ করবে। ফ্রন্টে রয়েছে ২০ মেগাপিক্সেল ও ২ মেগাপিক্সেলের দুইটি ক্যামেরা। ফ্রন্ট ক্যামেরাতে রয়েছে HDR মুড। ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিতে ওয়াটারমার্ক এড করার সুবিধা রয়েছে এবং চাইলে ইউজার নিজের নামে কাস্টমাইজেশন ও করে নিতে পারেন। বাজেট ফোনের মধ্যে one of the best ক্যামেরা সেট আপ প্রোভাইড করছে এই ডিভাইসটি।
৪. Xiaomi Poco x2 ফিঙ্গারপ্রিন্টঃ
সাধারণত এই বাজেটের মোবাইলগুলোতো Samsung, Realme সহ অন্যান্য কোম্পানি In display Optical fingerprint ব্যবহার করলেও শাওমি ব্যবহার করেছে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি পাওয়ার বাটনের জায়গায় অবস্থিত। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি বেশ ফাস্ট এবং আনলকিং স্পিড বাজেট রেঞ্জে একদম ফার্স্ট ক্লাস। এছাড়া ফেস আনলকিং স্পিড ও খুব সন্তোষজনক। সাথে সিকিউরিটি হিসেবে প্যাটার্ন লক, পাসওয়ার্ড লক তো থাকছেই।
৫. গেমিং এক্সপেরিয়েন্সঃ
ডিভাইসটিতে স্ন্যাপড্রাগনের 730G প্রসেসরটি ব্যবহৃত হয়েছে। বেশ পাওয়ারফুল এই প্রসেসরটি আপনাকে হাই কিংবা মিডিয়াম গ্রাফিক্সে ল্যাগ ছাড়াই সুন্দর গেমিং এক্সপেরিয়েন্স দিবে। হেভি ইউজের ফলে ফ্রেম ড্রপ দেখা দিতে পারে তবে সেটা খুব কম। ডিভাইসটি কেনার পর আমি পার্সোনালি PUBG mobile, Call of Duty Mobile, PES 2020, Bus Simulator Indonesia এসব গেম খেলেছি। Call of Duty তে টানা ৩ ঘন্টা গেমিং এও কোনো ফ্রেম ড্রপ, ল্যাগের দেখা পাইনি।
গ্রাফিক্স সেটিংস মিডিয়াম দিয়েই খেলার সাজেশন থাকলো বেস্ট আউটপুটের জন্য। আর যেহেতু এসব প্রচলিত গেমগুলো ৬০ হার্জের জন্য অপ্টিমাইজড, সে জন্য সাজেশন থাকবে গেমিং এর সময় ব্যাটারি সেভিংসের জন্য ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেট সেট করে গেম খেলার জন্য। ডিভাইসটির গেমারদের জন্য মোটামোটি মানের একটা ডিভাইস। হিটিং ইস্যু সেভাবে নাই তবে টানা গেমিং এ বাইরের পরিবেশ গরম হলে সামান্য হিট হতে পারে। সাধারণত ৪০ এর উপরে কখনো তাপমাত্রা উঠবে না। চার্জিং এর সময় ফাস্ট চার্জিং এর কারণে এরকম অতিরিক্ত তাপমাত্রা সৃষ্টি হতে পারে।
৬. Xiaomi Poco x2 সিকিউরিটিঃ
শাওমির সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।মিড রেঞ্জ বাজেটের সেট হিসেবে শাওমির এই ডিভাইসটি থেকে আপনি বেস্ট সিকিউরিটি সাপোর্ট পাবেন।শাওমির নিজস্ব User Interface MIUI এর বিভিন্ন আপডেটের মাধ্যমে সিকিউরিটি ইস্যুগুলো ফিক্স করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ জীবনকে সহজ করবে যে ৫টি অ্যাপস
এছাড়া আপনার ফোন কখনো চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে আপনার ফোনের যাবতীয় তথ্য শাওমির নিজস্ব তথ্য ভান্ডার mi cloud এ জমা থাকবে এবং বিনামূল্যে বেশ কয়েক জিবি স্পেস আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া “i.mi.com” এই সাইটটিতে গিয়ে আপনার mi account এ লগ ইন করে আপনার হারানো বা চুরি হওয়া মোবাইলটি লক করে দিতে পারবেন, যাবতীয় কনফিডেন্সিয়াল তথ্য এক ক্লিকে মুছে দিতে পারবেন, এবং ডিস্প্লেতে সিকিউরিটি মেসেজ অথবা ওয়ার্নিং মেসেজ দিয়ে সতর্ক করতে পারবেন।
এছাড়া আপনার ডিভাইসটি চালু থাকলে হারানো বা চুরি হওয়া মোবাইলটির লোকেশন ও আপনি নিমিষেই বের করে ফেলতে পারবেন। সিকিউরিটি সিস্টেমের জন্য শাওমির আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে। তবে, মাঝে মধ্যে কিছু বিরক্তিকর এডভার্টাইজ শো করতে পারে যা আপনার ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে অসন্তুষ্ট করতে পারে।
৭. র্যাম ও স্টোরেজঃ
মোবাইলটিতে ৬৪, ১২৮,২৫৬ জিবির স্টোরেজ ভার্সন রয়েছে। যত বেশি স্টোরেজের মোবাইল নিবেন দাম ও তত বেশি হবে। ১২৮ জিবি ভার্সন টা রিকমেন্ড করি আমি। আর র্যাম থাকছে ৬ জিবি যা পর্যাপ্ত গেমিং সহ যাবতীয় কাজ করার জন্য। তবে, ৮ জিবি র্যাম এর একটা ভ্যারিয়েন্ট ও পাওয়া যাবে মার্কেটে।
ভ্যারিয়েন্টগুলো হলোঃ
- ৬/৬৪ জিবি
- ৬/১২৮ জিবি
- ৮/২৫৬ জিবি।
৮. Xiaomi Poco x2 ওজনঃ
ফোনটির ওজন ২০৮ গ্রাম হওয়াতে বেশ ভারি লাগবে।সাথে সাইজ ও বেশ বড়।প্রথমদিকে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে যদি বড় সাইজের ফোন ইউজের পূর্ব অভ্যাস না থাকে।
ফোনটির কিছু নেগেটিভ সাইড
১. ডেডিকেটেড মাইক্রো এসডি স্লট নেই।একসাথে দুইটা সিম ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে ফোনের ইন্টার্নাল স্টোরেজ ব্যবহার করতে হবে,নাহলে একটি সিম ও একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
২. ফাস্ট চার্জিং এর কারণে ফোন চার্জে থাকা অবস্থায় বেশ গরম হয়।তবে নরমাল ইউজের সময় হিট সহনীয় পর্যায়েই থাকে।সেটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
৩. গ্লাস বডির ফোন হওয়ায় বেশ ভঙ্গুর।গরিলা গ্লাস ৫ এর প্রটেকশন থাকলেও হাত থেকে পড়লে সহজেই ভেঙে যেতে পারে।সাজেশন থাকবে প্যাকেটে থাকা ব্যাক কভার ইউজ না করে ভালো মানের একটা ব্যাক কভার কিনে ইউজ করার জন্য।
৪. ফ্রন্ট সেলফি ক্যামেরা নাইট মুডে ভালো পারফর্ম করেনা।
৫. ফোনটিতে কোনো এক্টিভ নোটিফিকেশন লাইট নেই। নোটিফিকেশ লাইট চালু করতে চাইলে ফোন রুট করে তারপর ব্যবহার করতে হবে। এবিষয়ে এক্সপার্ট কারও সহোযোগিতা নিতে পারেন।
তো এই হলো মোটামোটি একটা ধারণা ডিভাইসটি সম্পর্কে। ডিভাইসটির আকর্ষণীয় লুক দেখে কার না কিনতে মন চায়? যদি আপনার বাজেট থাকে ২২-২৫ হাজারের মধ্যে, নিয়ে নিতে পারেন বর্তমান সময়ের আলোচিত এই সেটটি। আপনাদের সাপোর্ট, ভালোবাসা পেলে আরও অনেক টেক রিলেটেড রিভিউ এবং আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো। ধন্যবাদ।
ছবিঃ সংগৃহীত