শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের দেশের গলিপথ, পাড়ার মোড়, মাঠ, খোলা জায়গা সব জায়গাই র্যাকেট আর শাটল হাতে তরুনদের দেখা মেলে । শাটল ছোড়াছুড়ির এ খেলাটিই ব্যাডমিন্টন নামে পরিচিত। ব্যাডমিন্টনের উপর আমাদের দেশের তরুনদের আগ্রহ কতটুকু তা নভেম্বর-ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারীর কুয়াশার রাতে ব্যাডমিন্টন কোটগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় । কেবলমাত্র তরুন নয় প্রায় সব বয়সের লোকই খেলাটি উপভোগ করে।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
মুলত পুর্বদিকের দেশগুলোর থেকেই ব্যাডমিন্টনের সূচনা হয়। ব্রিটেনে ব্যাটলডোর এন্ড শাটলকক হিসেবে ব্রিটিশদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল, এরপর আস্তে আস্তে ব্রিটেনের বাচ্চারাও এ খেলাটি বেশ উপভোগ করতে শুরু করে ।
মূলত ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তারা এই খেলাটির প্রচলন করেন। ব্যাডমিন্টন খেলাটি পুনাই নামেও পরিচিত। উনবিংশ শতাব্দি যখন শেষ প্রায় তখন এই খেলাটি ইংল্যান্ডে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীব্যাপী এই খেলাটি দ্রুত প্রসার লাভ করে ।
২০০৬ সালে ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক সংস্থা IBF (International Badminton Federation) নামে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে তা BWF (Badmonton world Federation) নামেই পরিচিত ।
১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটেনের Cheltenham শহরে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হয় । পরে ২০০৫ সালে এই সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় মালয়েশীয়ার কুয়ালালামপুরে সরিয়ে নেয়া হয় ।
এই সংস্থাটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা বাংলাদেশ সহ ১৬৯ টি । ১৯৯২ সালে ব্যাডমিন্টন খেলাকে অলিম্পিকের অন্তর্ভূক্ত করা হয় । মালয়েশীয়ার জাতীয় খেলা ব্যাডমিন্টন ।
ব্যাডমিন্টন একা অথবা দ্বৈত ভাবেও খেলা যায়। এই খেলাটির জন্য র্যাকেট এবং শাটল অত্যাবশ্যকীয় । এছাড়াও একটি নেট বা জাল, নির্দিষ্ট পোষাক, এবং কোর্টের প্রয়োজন হয়। নেটের উচ্চতা হয় পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি পরিমান এবং শাটলটির ওজন হয় পায় ৫-৫.৫০ গ্রাম । এরপরে একক বা দ্বৈত নিয়ম অনুযায়ী খেলাটি সম্পন্ন করা হয় ।
ব্যাডমিন্টন শুধু একটি খেলা না এটিকে শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও ধরা হয় । শীতের সময় নিজের শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এটি বেশ উপকারী। দেহের মেদ বা চর্বি কমাতে ব্যাডমিন্টনের জুড়ি নেই।
এক ঘন্টা ব্যাডমিন্টন খেলে প্রায় ৪৫০-৫০০ ক্যালরি মেদ বার্ন করা সম্ভব যা হাঁটা বা অন্য শরীরচর্চার তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। এই খেলাটিতে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া বা ডাইভিং এর ফলে শরীরে জমা হওয়া খারাপ চর্বিগুলো সহযেই ঝরে যায়।
এটি দেহের মধ্যাকার রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে ফলে দেহের কোষগুলো পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন পায় । ফলে ঘুম ভালো হয় এবং মনযোগ ঠিক থাকে ।
বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীরা হাঁটার পরিবর্তে শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে , কারন এটি রক্তে সুগারের পরিমান কমাতেও সাহায্য কড়ে এছাড়া এটি হ্রদরোগের ঝুঁকিও কমায় ।এ খেলার মাধ্যমে সামাজিকতাও বাড়ে । তাই প্রত্যেক মানুষের সুস্থ থাকাকালীন অবস্থায়ই এই খেলার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত ।
ব্যাডমিন্টন খেলার সময় অবশ্যই নিজের আরামদায়ক পোষাক পরিধান করতে হবে । এ খেলায় যেহেতু পায়ের উপর বেশি প্রেসার পরে তাই আরামদায়ক জুতা বা কেডস পরিধান করে নেয়াই ভাল ।
ব্যাডমিন্টনের কোটটি যাতে যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে । রাতে খেলার জন্য ইলেকট্রিক বাতিগুলো যথেষ্ট নিরাপদ কিনা যাচাই করে নেয়া ভাল ।
যেহেতু এটি একটি মৌসুমের খেলা তাই শীতের সময়টুকু আলসেমিতে কাটিয়ে না দিয়ে এক ম্যাচ ব্যাডমিন্টন খেলাই শ্রেয়।
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য লিখুন